ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০.৪% মুসলমান। এদেশে প্রথম ইসলাম প্রচার করেন ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী। ধারণা করা হয় ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে তার বাংলা বিজয়ের ৬০০ বছর আগেই সাহাবীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়। প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয় সে সময়েই । এবার আমরা নোয়াখালী জেলায় ইসলামের আগমন, প্রচার-প্রসার, কিভাবে ইসলাম তাদের মাধ্যমে হয়েছে এ ব্যাপারে জানবো -
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নোয়াখালী জেলায় মুসলিম সংখ্যা ৯৩.৪১%। বর্তমানে এ সংখ্যা আরো বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরে অলি -আউলিয়াদের ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে মূলত নোয়াখালীতে ইসলামের আগমন ঘটে ।
নোয়াখালি জেলায় যেভাবে ইসলামের আগমন ও প্রচার-প্রসার ঘটে
সৈয়দ আহমদ তান্নুরী ওরফে মিরান শাহের মাধ্যমে
সৈয়দ আহমদ তান্নুরী ওরফে মিরান শাহ (১৩০৩ খৃ) বৃহত্তর নোয়াখালীতে ইসলাম প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ অঞ্চলে প্রথম যুগের ইসলাম প্রচারকদের অন্যতম। এ জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে তার মাজার অবস্থিত । তিনি বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র) এর পৌত্র ছিলেন।
শাহজালাল মুজাররাদ এর মাধ্যমে
শাহজালাল মুজাররাদ সম্পর্কে সমকালীন পর্যটক ইবনে বাতুতা লিখেছেন, তার হাতে এদেশের অধিকাংশ লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে। বস্তুত, নোয়াখালী ও আসামের পশ্চিমাংশের বিভিন্ন জেলার অধিকাংশ লোক যে তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এ জেলা সমূহের অধিবাসীদের উপর আজও তার অপ্রতিহত প্রভাবে এই কথাই প্রমাণ করে। সিলেট শহরে তার মাজার অবস্থিত । হিজরী ৭০৩ সনে অর্থাৎ ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিলেট আগমন করেন।
সাইদ আহমদ কল্লা শহীদের মাধ্যমে
নোয়াখালী জেলার শসদিয়া রেলস্টেশনের কাছে সাইদ আহমদ কল্লা শহীদের একটি আস্তানা রয়েছে।এ থেকে অনুমান করা যায় যে নোয়াখালী ও তার আশেপাশে জেলাগুলোই ছিল তার কর্মক্ষেত্র। শাহজালাল সিলেট জয় করার পর তার শিষ্যদেরকে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে বিভিন্ন এলাকার প্রেরণ করেন । এ সময় সৈয়দ নাসির উদ্দিনের অধীনে ছিলেন সাইয়েদ আহমদ। এসব অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করার সময় তিনি বহুবাধার সম্মুখীন হন, এমনকি এক পর্যায়ে তাকে বিরুদ্ধেবাদীদের সাথে যুদ্ধ করতে হয় । সম্ভবত তরফের হিন্দুরা আচক নারায়ণের সাথে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ।এই যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হলেও সাইয়েদ আহমদ শহীদ হন। শাহাদাত বরণ করার পর কেবল তার মস্তকটি সমাধিস্থ করা হয় বলে তাকে কল্লা শহীদ বলা হয়।
শাহ পরাণের মাধ্যমে
শাহ পরাণসহ আরো অনেক অলি- আউলিয়া যাদের মাধ্যমে নোয়াখালী জেলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার লাভ করে। শাহজালাল যখন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রার উদ্যোগ নেয় ।এই সময় শাহ পরাণ খবর পেয়ে তার মামার সাহচর্য লাভের আশায় তার মামার সঙ্গী হন। সিলেট এবং নোয়াখালী সহ বিভিন্ন স্থানে তিনি ইসলাম প্রচার করেন।
রাসতি শাহের মাধ্যমে
রাসতি শাহের মাধ্যমে নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বহু অমুসলিম তার প্রচেষ্টায় ইসলামে দীক্ষিত হন। দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহের শাসনামলে (১৩৫১-১৩৮৮) বাংলায় আগমন করেন। তিনি হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ)এর বংশধর বলে পরিচিত।
শায়েখ বখতিয়ার মাইসুরের মাধ্যমে
বাংলার দক্ষিণ -পূর্ব দীপাঞ্চলে যারা ইসলাম প্রচার করেন তাদের মধ্যে শায়েখ বখতিয়ার মাইসুরের নাম সর্বাধিক প্রসিদ্ধ । সন্দ্বীপের রোহিণী নামক স্থানে তার মাজার অবস্থিত। শোনা যায় ,তিনিই নোয়াখালীর ইসলাম প্রচারে মাওলানা সাইয়েদ আহমদের সঙ্গে দিল্লি থেকে বাংলার এ অঞ্চলে আগমন করেন । ইসলাম প্রচারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফকরুদ্দীন মোবারক শাহের আমলে ( ১৩৩৮-১৩৫০ খৃ) তার সেনাপতি কদল খান গাজীর সহায়তায় শাহ বদর উদ্দিন আল্লামা উরফে বদর পীর ও তার সহচরগণ মগদেরকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে করে চট্টগ্রামে মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। সপ্তদশ শতকের শেষার্ধে শিহাব উদ্দিন তালিশ লিখিত ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এর আমলে চট্টগ্রাম মুসলমানদের দ্বারা সর্বপ্রথম বিজিত হয়। ইবনে বাতুতা (১৩৪৬ - ৪৭) যখন বাংলা সফর করেন তখন তিনি চট্টগ্রাম শহর ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের শাসনাধীন দেখেন। যদিও এ সময় বিজিত হয়েছে এর আগে ইসলামে এসে পৌঁছেছে। তিনি চট্টগ্রামকে নিজের রাজধানীতে পরিণত করেন। আর নোয়াখালী চট্টগ্রামের নিকটে অবস্থিত হওয়ায় চট্টগ্রামে ইসলাম আগমনের সময় কালকে নোয়াখালীতে ইসলাম আগমনের সময়কাল হিসেবে ধরা হয়।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশে ইসলাম
বইয়ের লেখক: আব্দুল মান্নান তালিব
পোস্ট লিখেছেন: মাইমুনা সুলতানা
ক্লাস ওয়ান থেকে বিসিএস পর্যন্ত পড়ালেখা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
ওয়েবসাইট লিংক: WWW.FAIFINITY.COM
