সূরা আল ফাতিহা পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা সাত। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে এটি প্রথম সূরা। একে “উম্মুল কিতাব” বা “কিতাবের জননী” বলা হয়। এটি প্রত্যেক নামাযের অপরিহার্য অংশ। সূরা ফাতিহা মুসলমানদের জীবনে সবচেয়ে বেশি পাঠ করা সূরা, যা আল্লাহর রহমত, দিকনির্দেশনা ও দোয়া ধারণ করে। এই সূরায় মোট ৭টি আয়াত, ২৯টি শব্দ এবং ১১৩টি হরফ রয়েছে।
সূরা ফাতিহার অর্থ ও নামকরণ
'ফাতিহা' শব্দের অর্থ
'ফাতিহা' (الفاتحة) শব্দটি আরবি 'ফাতহুন' (فتح) থেকে এসেছে, যার মূল অর্থ হলো:
- শুরু বা সূচনা (Opening)
- আরম্ভ বা উদ্বোধন (Inauguration)
- উদঘাটন (Unveiling)
নামকরণের কারণ
এই সূরাটির নামকরণ 'ফাতিহা' করার প্রধান কারণগুলো হলো:
- কুরআনের সূচনা বা মুখবন্ধ: সূরা ফাতিহা কুরআনুল কারীমের প্রথম সূরা। “ফাতিহা” শব্দের অর্থ হলো উদ্বোধন, সূচনা বা শুরু। যেহেতু এই সূরার মাধ্যমেই আল-কুরআন শুরু হয়েছে, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা ফাতিহা। কুরআন পড়া বা সংকলন করা উভয়ই এই সূরা দিয়ে শুরু হয়। তাই একে 'ফাতিহাতুল কিতাব' বা কিতাবের সূচনা বলা হয়।
- নামাজের আরম্ভ: ইসলামের মূল ইবাদত সালাত বা নামাজও এই সূরা পাঠের মাধ্যমে শুরু হয়। নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ফরজ।
- উম্মুল কুরআন / উম্মুল কিতাব (أم القرآن / أم الكتاب): এর অর্থ কুরআনের জননী বা কিতাবের মা। যেহেতু এই সূরাটিতে সমগ্র কুরআনের মৌলিক বিষয়বস্তু, যেমন: আল্লাহর প্রশংসা, ইবাদত, এবং সরল পথের প্রার্থনা। সংক্ষেপে সন্নিবেশিত হয়েছে, তাই এটি কেন্দ্রীয় মর্যাদা লাভ করেছে।
- আস্-সাব্'য়ুল মাসানী (السبع المثاني): এর অর্থ বারবার পঠিত সাতটি আয়াত। যেহেতু এই সূরায় ৭টি আয়াত রয়েছে এবং নামাজে তা বারবার পাঠ করা হয়, তাই একে এই নামেও ডাকা হয়।
- সূরাতুল হামদ (سورة الحمد): এর প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসার কথা বলা হয়েছে ('আলহামদু লিল্লাহ'), তাই একে প্রশংসার সূরা বলা হয়।
- সূরাতুশ শিফা (سورة الشفاء): এর অর্থ আরোগ্যের সূরা। হাদিসে এই সূরাকে অনেক শারীরিক ও আত্মিক রোগের শেফা বা আরোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- আস-সালাত: কারণ এই সূরা নামাযের এটি অপরিহার্য অংশ।
সূরা ফাতিহা নাযিলের সময়কাল
সূরা ফাতিহা কুরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। এর নাযিলের সময় নিয়ে মুফাসসিরদের মধ্যে কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়:
- প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা: যদিও কোরআনের প্রথম ওহী ছিল সূরা আলাকের প্রথম কয়েকটি আয়াত (খণ্ড আয়াত), তবে নির্ভরযোগ্য মতানুসারে সূরা ফাতিহাই হলো প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা যা রাসূল (সা.)-এর ওপর একত্রে নাযিল হয়। সূরা ফাতিহা মুহাম্মদ (সা:) এর উপর অবতীর্ণ হয় তার নবুয়ত লাভের প্রথম যুগে। হাদিসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা অনুযায়ী এটি মুহাম্মদ (সা:) এর উপর অবতীর্ণ হওয়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। সূরা ফাতিহা অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বিচ্ছিন্ন কিছু আয়াত নাজিল হয়েছিল সেগুলো সূরা 'আলাক', সূরা 'মুজাম্মিল' ও সূরা 'মুদ্দাসসির' এ সন্নিবেশিত হয়েছে।
- অবতীর্ণের স্থান ও সময়: এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত লাভের একেবারে প্রথম যুগে মক্কা মুকাররামায় অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ, এটি হিজরতের (মক্কা থেকে মদিনায় যাত্রার) পূর্বে নাযিল হয়েছিল। অধিকাংশ আলেমের মতে সূরা ফাতিহা মক্কায় নাযিল হয়েছে। কারণ এর আলোচনার ধরণ মক্কায় নাযিলকৃত সূরার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিছু আলেমের মতে সূরা ফাতিহা মদিনায় নাযিল হয়েছে।
- যতবার নাযিল হয়েছে: অনেক মুফাসসির বলেছেন, সূরা ফাতিহা দুইবার নাযিল হয়েছে। একবার মক্কায় এবং একবার মদিনায়। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো, সূরা ফাতিহা প্রথমে মক্কায় নাযিল হয়েছে, পরে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য আবার মদিনায় নাযিল হয়েছিল।
- নামাজ ও ফাতিহা: নামাজ মক্কায় ফরজ হওয়ার সাথে সাথে এই সূরাটি নাযিল হয়, অথবা তার খুব কাছাকাছি সময়ে নাযিল হয়। কারণ, হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি ফাতিহাতুল কিতাব (সূরা ফাতিহা) পাঠ করে না, তার নামাজ হয় না।" এই আয়াত ছাড়া যেহেতু নামাজ শুদ্ধ হয় না, তাই এটি ইসলামের একেবারে প্রাথমিক লগ্নেই নাযিল হওয়া আবশ্যক ছিল।
সংক্ষেপে বলা যায়, সূরা ফাতিহা নবুওয়তের প্রথম দিকের সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ এবং এটিই পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছিল।
সূরা ফাতিহার বিষয়বস্তু
এই সূরার প্রথম আয়াত গুলোতে মহান আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও তার গুণাবলী আর শেষের আয়াতগুলোতে তার কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের শুরুতে দোয়া রাখার অর্থ হচ্ছে যদি কেউ এ গ্রন্থ থেকে লাভবান হতে চায় তাহলে নিখিল বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের কাছে দোয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে কাজেই কুরআনের শুরুতে এই দোয়া শিক্ষা দিয়ে যেন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সত্য পথের সন্ধান লাভের জন্য এই কিতাবটি পড়ো, সত্য জানা ও অনুসন্ধানের জন্য এর পাতা উল্টাও এবং নিখিল বিশ্বজাহানের মালিক রাজাধিরাজ ও প্রভু আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র উৎস। এ কথা অন্তরে গেঁথে নিয়ে একমাত্র তার কাছে পথ নির্দেশের আর্জি পেশ করেই এই কিতাব পাঠের সূচনা কর। শেষের আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে হেদায়েত প্রার্থনা করা হয়েছে এবং আল্লাহ যেন তার বান্দাকে ইহুদি ও নাসারাদের অন্তর্ভুক্ত না করেন তা প্রার্থনা করা হয়েছে। নিচে কিছু পয়েন্টের মাধ্যমে সূরা ফাতিহার বিষয়বস্তু গুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
- আল্লাহর সার্বভৌমত্ব করুণা, প্রশংসা ও গুণবর্ণনা (১-২) আল্লাহ হচ্ছেন সমগ্র জগতের রব্ব, দয়াময় ও করুণাময়, বিচার দিনের মালিক। শুরুতেই বিসমিল্লাহ-এর মাধ্যমে আল্লাহর করুণা (রহমান ও রহীম) স্বীকার করা হয়। এরপর বলা হয়, সমস্ত প্রশংসা কেবল সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক (রাব্বিল আলামীন) আল্লাহর জন্য, যিনি অত্যন্ত দয়ালু। এটি আল্লাহর 'রবূবিয়্যাত' (প্রতিপালকত্ব) এবং 'রহমতের' (দয়া) গুণকে তুলে ধরে।
- কর্মফল দিবসের মালিকানা (৩): আল্লাহকে বিচার দিবসের একমাত্র মালিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পরকাল বা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের মূলনীতি এবং আল্লাহর 'মালাকূতের' (সার্বভৌম ক্ষমতা) বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- ইবাদতের ঘোষণা ও একাগ্র ইবাদতের অঙ্গীকার (৪): বান্দা ঘোষণা করে, "আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি এবং শুধু আপনারই কাছে সাহায্য চাই।" এটি একনিষ্ঠ তাওহীদ আল-উলূহিয়্যাহ (ইবাদতে একত্ববাদ) এবং ভরসার চূড়ান্ত প্রকাশ। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে।
- হেদায়াতের জন্য দোয়া বা সরল পথের প্রার্থনা (৫): বান্দা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যাতে তিনি আমাদেরকে সরল পথ দেখান। এটিই সূরার মূল দোয়া: "আমাদেরকে সরল পথ (সিরাত্বাল মুস্তাকীম) দেখান।" এই পথ হলো এমন পথ, যা জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়— এটিই সমগ্র কুরআনের মূল উদ্দেশ্য।
- সরল পথের প্রার্থনা (৬): এটিই সূরার মূল দোয়া: "আমাদেরকে সরল পথ (সিরাত্বাল মুস্তাকীম) দেখান।" এই পথ হলো এমন পথ, যা জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। এটিই সমগ্র কুরআনের মূল উদ্দেশ্য। সেই পথ, যাদের প্রতি আল্লাহ নিয়ামত দান করেছেন।
- পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার আকুতি (৭): সরল পথের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, সেই পথ যা নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের পথ; আর সেই পথ নয়, যা ক্রোধ-নিপতিত (যেমন ইহুদি) ও পথভ্রষ্টদের (যেমন খ্রিস্টান) পথ। এই আয়াতে বান্দা সঠিক পথের সংজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে জানতে চায় এবং ভুল পথ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যারা আল্লাহর গজবের শিকার এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তাদের পথ থেকে বাঁচার দোয়া।
সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ (৭টি আয়াত)
সূরা ফাতিহায় মোট ৭টি আয়াত, ২৯টি শব্দ এবং ১১৩টি হরফ রয়েছে। নিচে এর প্রতিটি আয়াতের বাংলা উচ্চারণ এবং সরল অর্থ দেওয়া হলো:
আয়াত | আরবি | বাংলা উচ্চারণ | বাংলা অর্থ |
---|---|---|---|
১ | بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ | বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। | পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। |
২ | ٱلْـَحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِينَ | আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। | সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। |
৩ | ٱلرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ | আর-রাহমানির রাহীম। | তিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। |
৪ | مَـٰلِكِ يَوْمِ الدِّينِ | মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। | তিনি বিচার দিনের মালিক। |
৫ | إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ | ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন। | আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। |
৬ | ٱهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ | ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম। | আমাদের সরল পথে পরিচালিত করো। |
৭ | صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ | সিরাতাল্লাযীনা আন’আমতা আলাইহিম গইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন। | তাদের পথ, যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ; তাদের পথ নয়, যাদের উপর তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট। |
সূরা ফাতিহা আরবি
১. بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
২. الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعٰلَمِين
৩. الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
৪. مٰلِكِ يَوْمِ الدِّينِ
৫. إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
৬. اهْدِنَا الصِّرٰطَ الْمُسْتَقِيمَ
৭. صِرٰطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا
الضَّآلِّينَ
সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ
১. বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম।
২. আলহামদুলিল্লাইহি রব্বিল আ-লামি---ন।
৩. আর রহমানির রহি---ম।
৪. মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি---ন।
৫. ইয়্যা-কা না'বুদু অইয়্যাকা নাসতাই'---ন।
৬. ইহদিনাস সিরা-তল মুসতাকি---ম।
৭. সিরাতল্লাজি-না আনাআ'মতা আ'লাইহিম গইরিল মাগদু-বি আ'লাইহিম অলাদ্দল্লি----ন।
আমীন।
সতর্কতা!
পবিত্র কুরআনুল কারিম কে বাংলা উচ্চারণে পড়া বা তেলাওয়াত করা কোনোভাবেই ঠিক
নয়। শুধুমাত্র নওমুসলিম ও কুরআন পাঠে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বাংলা উচ্চারণ দেয়া
হয়েছে। অতি শীঘ্রই যোগ্য আলিমের কাছ থেকে পবিত্র কুরআন পাঠ শিখে নেওয়ার অনুরোধ
রইল।
সূরা ফাতিহা বাংলা (বায়ান ফাউন্ডেশন)
১. পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে।
২. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।
৩. দয়াময়, পরম দয়ালু, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
৪. বিচার দিবসের মালিক।
৫. আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই।
৬. আমাদেরকে সরল পথ দেখান। পথের হিদায়াত দিন।
৭. তাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করেছেন। যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর
(আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।
সূরা ফাতিহা বাংলা (মুজিবুর রহমান)
১. পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
২. আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা, যিনি বিশ্বজগতের রাব্ব।
৩. যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়।
৪. যিনি বিচার দিনের মালিক।
৫. আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।
৬. আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
৭. তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার
গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমীন!!
Surah Fatiha English Translation (Sahih International)
1. In the name of Allah, the Entirely Merciful, the Especially Merciful.
2. [All] praise is [due] to Allah, Lord of the worlds.
3. The Entirely Merciful, the Especially Merciful.
4. Sovereign of the Day of Recompense.
5. It is You we worship and You we ask for help.
6. Guide us to the straight path -
7. The path of those upon whom You have bestowed favor, not of those who have
evoked [Your] anger or of those who are astray.
সুরা ফাতিহা সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস
১.
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ
حَدَّثَنَا الزُّهْرِيُّ، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ
الصَّامِتِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ صَلاَةَ
لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ".
‘উবাদাহ ইব্নু সমিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরা আল-ফাতিহা পড়ল না তার সালাত
হলো না।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৫৬।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
২.
حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شَيْبَانُ، عَنْ يَحْيَى،
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي قَتَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الأُولَيَيْنِ مِنْ صَلاَةِ
الظُّهْرِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَتَيْنِ، يُطَوِّلُ فِي الأُولَى،
وَيُقَصِّرُ فِي الثَّانِيَةِ، وَيُسْمِعُ الآيَةَ أَحْيَانًا، وَكَانَ يَقْرَأُ
فِي الْعَصْرِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَتَيْنِ، وَكَانَ يُطَوِّلُ فِي
الأُولَى، وَكَانَ يُطَوِّلُ فِي الرَّكْعَةِ الأُولَى مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ،
وَيُقَصِّرُ فِي الثَّانِيَةِ.
আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) যুহরের প্রথম দু’ রাক’আতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে আরও দু’টি সূরা পাঠ
করতেন। প্রথম রাক’আতে দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাক’আত সংক্ষেপ করতেন। কখনো কোন
আয়াত শুনিয়ে পড়তেন। ‘আসরের সালাতেও তিনি সূরা ফাতিহার সাথে অন্য দু’টি সূরা
পড়তেন। প্রথম রাক’আত দীর্ঘ করতেন। ফজরের প্রথম রাক’আতও তিনি দীর্ঘ করতেন এবং
দ্বিতীয় রাক’আতে সংক্ষেপ করতেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৫৯।
হাদিসের
মান: সহিহ হাদিস।
৩.
وَعَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ
اللّٰهِ ﷺ: «فِىْ فَاتِحَةِ الْكِتَابِ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ». رَوَاهُ
الدَّارِمِىُّ وَالْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ
‘আবদুল মালিক ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরা আলফাতিহার মধ্যে সকল রোগের আরোগ্য
রয়েছে। (দারিমী, বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান)।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং
২১৭০।
হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস।
৪.
عَن سَمُرَةَ بن جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّم إِذَا قَالَ الإِمَامُ: "غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلا
الضَّالِّينَ فَقُولُوا: آمِينَ يُجِبْكُمُ اللهُ
সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেন, “ইমাম ‘গাইরিল মাগযূবিআলাইহিম অলায য্বা-ল্লীন’ বললে তোমরা
‘আমীন’ বল। তাহলে (সূরা ফাতিহায় উল্লিখিত দুআ) আল্লাহ তোমাদের জন্য মঞ্জুর করে
নেবেন।” (ত্বাবারানী ৬৭৪৮, সহীহ তারগীব ৫১৬নং, মুসলিম আবূ মূসা কর্তৃক ৯৩১নং)
হাদিস
সম্ভার, হাদিস নং ৬৬০।
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
৫.
وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: صَلَّيْتُ خَلْفَ
ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ، فَقَرَأَ فَاتِحَةَ الكِتَابِ فَقَالَ:
لِتَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ত্বলহাহ্ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আমি
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) এর পিছনে জানাযার সলাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা
পাঠ করলেন এবং (সলাত শেষে) বললেন, (আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করলাম) যাতে লোকেরা জানতে
পারে যে, এটা সুন্নাত।
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৫৬৫।
হাদিসের মান: সহিহ
হাদিস।
সূরা ফাতিহার PDF
নিচে দেওয়া লিঙ্ক থেকে সুরা ফাতেহার পিডিএফ ডাউনলোড করে নিন।
উপসংহার
সূরা ফাতিহা শুধু একটি সূরা নয়, বরং পুরো কুরআনের সারাংশ। এতে রয়েছে আল্লাহর প্রশংসা, দোয়া, দিকনির্দেশনা ও পরকালের শিক্ষা। প্রতিটি মুসলিমের জীবনে এর গুরুত্ব অপরিসীম। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে সূরা ফাতিহা ও পবিত্র কুরআনের মধ্যকার সম্পর্ক কোন বই ও তার ভূমিকার পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং এই সম্পর্কটি দোয়ার পর্যায় ভুক্ত। বান্দা তার রবের কাছে দোয়া করে 'হে প্রভু আমাকে পথ দেখান'। আর মহান রব প্রতিউত্তরে তার সামনে এই গ্রন্থ পেশ করেন। যাতে করে বান্দা সঠিক পথের দিশা লাভ করতে পারে।